Google Ads

ফোনে কথা বলার আদবকেতা-কৃষিসেবা২৪

ফোনে কথা বলার আদবকেতা-কৃষিসেবা২৪

ফোনে কথা বলার আদবকেতা


 
মোবাইল ফোন এখন মানুষের অপরিহার্য অনুষঙ্গ। মোবাইল ফোন থাকলে কাজকর্ম ও যোগাযোগ অনেকটা সহজ হয়। ফোন ব্যবহারের সুযোগ-সুবিধা যেমন রয়েছে, তেমনি বিভিন্ন ধরনের অসুবিধাও আছে। তাই নিয়মনীতি ও সতর্কতা অবলম্বন করে ফোন ব্যবহার করা চাই।

শুরুতে সালাম দেওয়া : 


ফোনে কথা বলার ক্ষেত্রে আগে আগে সালাম দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব থাকা চাই। অন্যথায় যার আগে কথা বলার সুযোগ হবে, তিনি সালামের মাধ্যমে কথা শুরু করবেন। অনেক সময় রিসিভকারী ‘হ্যালো’ বলে চুপ করে থাকেন, এমনটি ঠিক নয়। আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘মানুষের মাঝে আল্লাহর কাছে সর্বোত্তম ওই ব্যক্তি, যে আগে সালাম দেয়। 
__________(আবু দাউদ, হাদিস : ৫১৯৭)

প্রতিবার সালাম দিয়ে কথা শুরু করা : 


বারবার ফোন করার প্রয়োজন হলে প্রতিবারই সালাম দেওয়া উচিত। রাসুল (সা.) এ ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করে বলেছেন, ‘কেউ যদি তার মুসলমান ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে, তাহলে সে যেন তাকে সালাম দেয়। অতঃপর যদি কোনো গাছ বা পাথর (অল্প সময়ের জন্য হলেও) দুজনের মাঝে আড়াল সৃষ্টি করার পর পুনরায় তাদের সাক্ষাৎ হয়, তাহলে যেন আবার সালাম দেয়। ’
__________(আবু দাউদ, হাদিস : ৫২০০)

 অপ্রয়োজনে ফোন না করা : 


একান্ত অপারগতা বা বিপদাপদ ছাড়া স্বাভাবিক অবস্থায় বিশ্রাম বা ঘুমের সময় ফোন না দেওয়া। এতে অহেতুক মানুষকে কষ্ট দেওয়া হয়।

রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, ‘প্রকৃত মুসলমান ওই ব্যক্তি, যার হাত ও জিহ্বা থেকে অপর মুসলমান নিরাপদ থাকে। ’ (বুখারি, হাদিস : ১০)

রিসিভ না হলে অপেক্ষা করা : 


প্রথমবার কল করার পর দ্বিতীয়বার কল করার জন্য এতটুকু সময় বিরতি দেওয়া, যাতে কল রিসিভকারী নামাজে, পানাহারে কিংবা টয়লেটে অথবা এ জাতীয় কোনো ব্যক্তিগত প্রয়োজনে থাকলে তা সেরে এসে ফোন ধরতে পারেন। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদের ঘর ছাড়া অন্য ঘরে প্রবেশ করো না, যে পর্যন্ত আলাপ-পরিচয় না করো এবং গৃহবাসীদের সালাম না করো। এটাই তোমাদের জন্য উত্তম; যাতে তোমরা স্মরণ রাখো। ’
__________(সুরা নুর : ২৭)

আগে নিজের পরিচয় দেওয়া : 


ফোন রিসিভ হওয়ার পর ফোনকারী সর্বপ্রথম নিজের পরিচয় দেবেন। এরপর ফোন রিসিভকারী উদ্দেশিত ব্যক্তি কি না, সে সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে নেওয়া চাই। পরিচয়পর্ব শেষ হওয়ার পর  যিনি ফোন করেছেন তিনি নিজের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করবেন। জাবের (রা.) বলেন, আমার বাবার কাছে রাসুল (সা.)-এর কিছু ঋণ ছিল। তা দিতে আমি তার ঘরের দরজার সামনে এসে খটখট করলাম। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘কে?’ আমি বললাম, ‘আমি! আমি!’ (পরিচয় না পাওয়ায় এবং অযথা কাজে বিরক্ত করায়) তিনি বিষয়টি অপছন্দ করেন। 
__________(বুখারি, হাদিস : ৬২৫০)

অপরিচিতের সঙ্গে কথা বলার ক্ষেত্রে সতর্কতা :


শরিয়ত গাইরে মাহরাম নারী-পুরুষের সঙ্গে প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে পর্দা রক্ষা করে প্রয়োজন পরিমাণ কথা বলার অবকাশ দিয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে আকর্ষণ সৃষ্টিকারী কোনো আচরণ-উচ্চারণ সম্পূর্ণ হারাম। কাজেই কোনো গাইরে মাহরাম নারী-পুরুষকে ফোন করতে হলে এ বিষয়টির প্রতি লক্ষ রাখা আবশ্যক। 
__________(ফতোয়ায়ে শামি : ৬/৩৬৯)

সময় বুঝে কথা বলা : 


কথা দীর্ঘ কিংবা গুরুত্বপূর্ণ হলে ফোন রিসিভকারী এখন কথা বলার মতো অবস্থায় আছেন কি না, তা জেনে নেওয়া। এখন সময় না থাকলে পরে তিনি কখন সময় দিতে পারবেন, তা জেনে কল করা। 
__________(ফতোয়ায়ে শামি : ৫/৫০৯)

মিথ্যা সংবাদ না দেওয়া : 


মোবাইল ফোনে কথা বলার সময় অনেকেই ‘আপনি এখন কোথায় আছেন?’ জাতীয় প্রশ্নের উত্তরে মিথ্যা বলে থাকেন। অথচ (ক্ষতির আশঙ্কা না থাকলে) মিথ্যা বলা কবিরা গুনাহ। রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, ‘মুনাফেকের আলামত তিনটি কথা বললে মিথ্যা বলে; ওয়াদা করলে ভঙ্গ করে; তার কাছে আমানত রাখা হলে খেয়ানত করে। ’
__________(বুখারি, হাদিস : ৩৩)

কথা শেষ হওয়ার আগেই লাইন কেটে না দেওয়া : 


মোবাইল ফোনে কথা শেষ হলে সালামের আদান-প্রদান শেষ হওয়ার আগেই লাইন কেটে দেওয়া ঠিক নয়। কেননা সালামের জবাব পারতপক্ষে শুনিয়ে দেওয়া ওয়াজিব।
__________(ফতোয়ায়ে শামি : ৬/৪১৩)

জামাতে নামাজের সময় কল না করা : 


এতে নামাজের একাগ্রতায় ব্যাঘাত ঘটতে পারে। ক্ষেত্রবিশেষে জামাতের অন্য মুসল্লিদের নামাজে বিঘœ ঘটতে পারে। উপরন্তু যদি মোবাইল ফোন সাইলেন্স করা থাকে, তবে ফোনকারী নিজেও পেরেশান হবে যে, কেন ফোন রিসিভ হচ্ছে না! আমের ইবনে রাবিয়া তার বাবার সূত্রে বর্ণনা করেন, কোনো এক সফরে আমরা রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে ছিলাম। রাত ঘুটঘুটে অন্ধকার ছিল। ফলে কেবলা ঠিক করতে পারছিলাম না। তাই প্রত্যেকে নিজের হাওদায় নামাজ আদায় করি। সকালে রাসুল (সা.)-কে বিষয়টি অবহিত করা হলে আয়াত অবতীর্ণ হয়। 
__________(তিরমিজি, হাদিস : ৩৪৬)

যার প্রয়োজন সে ফোন করা : 


কাউকে ফোন করা হলে তিনি যদি রিসিভ না করেন এবং পরে ফিরতি কল করেন, তাহলে তার কল কেটে দিয়ে নিজে কল ব্যাক করা চাই। প্রয়োজন যার, তিনিই পয়সা খরচ করে ফোন করবেন, নীতি এমনই হওয়া উচিত। 
__________(আল-আশবাহ লি-ইবনে নুজাইম : ১/৩৭৭)

ফ্রি মিনিট পেয়ে অনর্থক কথা না বলা : 


অনেকে ফ্রি মিনিট পেয়ে অনর্থক কথাবার্তা বলতে থাকেন, এটা উচিত নয়। কেননা, রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও কেয়ামত দিবসের ওপর ইমান রাখে, সে যেন ভালো কথা বলে অথবা চুপ থাকে। ’ 
__________(মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ৭৬২৬)

বিরক্তি সৃষ্টি না করা : 


বাস, ট্রেন কিংবা জনবহুল স্থানে কথা বলার ক্ষেত্রে অনেকে উচ্চ আওয়াজে কথা বলে থাকেন। এমনটা ঠিক নয়। কেননা এতে অকারণে অন্যের বিরক্তি সৃষ্টি করা হয়; অসুস্থ কিংবা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত অথবা কোনো পরীক্ষার্থীকে অনর্থক কষ্ট দেওয়া হয়। কাজেই এ জাতীয় স্থানে নিচু স্বরে কথা বলা আবশ্যক। উপরন্তু নিচু আওয়াজে কথা বললে নিজের গোপনীয়তাও বজায় থাকে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘প্রকৃত মুসলমান ওই ব্যক্তি, যার হাত ও জিহ্বা থেকে অপর মুসলমান নিরাপদ থাকে। ’ 
__________(বুখারি, হাদিস : ১০)

গাড়ি চালানো অবস্থায় কথা না বলা : 


অনেক সময় চালক গাড়ি চালানোর সময় কথা বলে থাকেন। দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকায় এমনিতেই এ ধরনের আচরণ আইনত দণ্ডনীয়। উপরন্তু শরিয়তের দৃষ্টিতেও তা অবশ্যই পরিত্যাজ্য। একান্ত প্রয়োজন হলে গাড়ি থামিয়ে কথা বলা উচিত।
__________(বুহুস ফি কাজায়া : ১/৩১০)

No comments

Theme images by konradlew. Powered by Blogger.
close