ফসলের গোড়া পচা ও ঢলে পড়া দমনে শতভাগ কার্যকরী জৈব বালাইনাশক। কৃষিসেবা২৪
ফসলের গোড়া পচা ও ঢলে পড়া দমনে শতভাগ কার্যকরী জৈব বালাইনাশক। কৃষিসেবা২৪
বিনা-জৈব ছত্রাকনাশক ফসলের রোগবালাই দমনকারী একটি জীবাণু গঠিত ছত্রাকনাশক। এন্টাগোনিস্টিক ট্রাইকোডারমা ছত্রাকে (টিআরডি-১০) ৫০, ১০০, ১৫০, ২০০, ৩০০ এবং ৩৫০ গ্রে মাত্রার রেডিয়েশন প্রয়োগ করে প্রাপ্ত শক্তিশালী আইসোলেটটি (টিআরডি-১০এম) উক্ত জৈব ছত্রাকনাশক ফরমুলেশনে ব্যবহার করা হয়। বিভিন্ন ফসলের গোড়া পচা ও ঢলে পড়া রোগ দমনে এটি কার্যকরী। এটি কৃষিজ উচ্ছিষ্টে জন্মানো একটি পেস্টিসাইড। তবে পিট মাটি বা ট্যালকম পাউডারেও ফরমুলেটেড করা যায়। বিভিন্ন গবেষণায় মসুর, ছোলা, সয়াবিন, টমেটো ও ঢেঁড়সের গোড়া পচা রোগ এমনকি ধানের খোলপোড়া রোগ দমনেও এটির কার্যকারিতা প্রমাণিত হয়েছে।
বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, ময়মনসিংহের উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব বিভাগে ফসলের রোগ দমনে নিবিড় গবেষণার ফলশ্রুতিতে উক্ত পরিবেশবান্ধব জৈব ছত্রাকনাশক উদ্ভাবন হয়। এটি জীবাণু গঠিত তাই ব্যবহার ও প্রয়োগ পদ্ধতি অন্যান্য রাসায়নিক পেস্টিসাইড থেকে একটু ভিন্ন। ব্যবহারের কৌশলের ওপর রোগদমন কার্যকারিতা অনেকাংশেই নির্ভর করে।
বিনা-জৈব ছত্রাকনাশক ব্যবহারের উপকারিতা
এ জৈব ছত্রাকনাশক মসুর, ছোলা, সয়াবিন, টমেটো, ঢেঁড়সের গোড়া পচা, ঢলে পড়া এবং ফুল ফল নষ্টকারী রোগ দমন করে, ফলে জমিতে প্রয়োজনীয় সুস্থ গাছের সংখ্যা নিশ্চিত হয় এবং তা সমবণ্টিত থাকায় ফলন বেশি হয়।
নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে প্রয়োগ করলে ধানের খোলপোড়া রোগের আক্রমণ প্রায় ৬০% কমে য়ায়।
ফসলের কোনো উপকারী অনুজীবকে ধ্বংস করে না তাই এর ব্যবহারে পরিবেশের কোনো ক্ষতি হয় না।
মাটি ও ফসলের গুণাগুণ অক্ষুন্ন রাখে এবং কোনো কোনো ফসলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
সংক্ষিপ্ত প্রশিক্ষণ হলেই কৃষক উক্ত ছত্রাকনাশক সহজেই ব্যবহার করতে পারবেন।
এটি পরিবেশবান্ধব যা রাসায়নিক ছত্রাকনাশকের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
রাসায়নিক ছত্রাকনাশক বারবার ব্যবহারে মাটির গুণাগুণ নষ্ট হয়, জৈব ছত্রাকনাশকে বরং মাটির গুণাগুণ আরও বৃদ্ধি পায়।
এটি বাড়ির আঙিনায় আবর্জনা ও জৈব পদার্থ দ্রুত পচনে সহায়তা করে তাই ফসলের কম্পোস্ট তৈরিতে ব্যবহার করা যায়।
অর্ধ শুষ্ক গোবরের সাথে (৪০ কেজি গোবরে এক কেজি জৈব ছত্রাকনাশক) উত্তমরূপে মিশিয়ে ৭ থেকে ১০ দিন পলিথিন দিয়ে ঢেকে রেখে যে কোনো ফসলের জমিতে প্রয়োগ করলে একদিকে মাটি বাহিত রোগ দমন হয় অন্যদিকে জৈব পদার্থ ডিকম্পজিশন করে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে এবং ফসলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
মাটি ও বীজ শোধন পদ্ধতি
যে মাটিতে প্রতি বছর ফসলে গোড়া পচা রোগ দেখা যায় সেই মাটিতে জো-কন্ডিশনে বীজ বপন বা চারা রোপণের সাত দিন পূর্বে উক্ত ছত্রাকনাশক ১০০ কেজি প্রতি হেক্টরে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে এবং ২০ দিন পর পর দুই বার ৫০ কেজি করে প্রয়োগ করতে হবে। ধানের খোলপোড়া রোগে চারা রোপণের ৩০, ৫০ এবং ৭০ দিন পর পর প্রয়োগ করতে হবে।
টবের মাটিতে ব্যবহার করতে হলে ৬ ইঞ্চি গভীর পর্যন্ত প্রতি কেজি মাটিতে ২ গ্রাম হিসেবে দিতে হবে। বীজতলাতেও অনুরূপে ব্যবহার করা যায়। তবে বীজ বপন বা চারা রোপণের ৭ দিন পূর্বে প্রয়োগ করতে হবে।
বীজ শোধনে বীজের ওজনের ৩% উক্ত ছত্রাকনাশক ব্যবহার করতে হবে।
ব্যবহারকারীর জন্য সতর্কতা
উৎপাদনের ৩ মাসের মধ্যে ব্যবহার করলে উত্তম ফল পাওয়া যায়।
রোদে বা বেশি তাপমাত্রায় (৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে) এর গুণাগুণ দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। তাই অপক্ষোকৃত ঠা-া স্থানে সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।
ব্যবহার করার সময় নাকে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।
তথ্যসূত্রঃ
ড. মো. আবুল কাসেম*
*প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এবং বিভাগীয় প্রধান, উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব বিভাগ, বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট; ময়মনসিংহ।shembina@gmail.com
No comments