ভালো ফলন পেতে আম গাছের আগাম পরিচর্যা করবেন যেভাবে।
ভালো ফলন পেতে আম গাছের আগাম পরিচর্যা করবেন যেভাবে।
বর্ষার পরবর্তী সময়ে আম গাছ এবং বাগান পরিচর্যা করার একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। এ সময়ে গাছে বিভিন্ন ক্ষতিকর পতঙ্গের আক্রমণ, গাছের পুষ্ঠিবিধানের সমস্যা, গাছের খাদ্যভাব দেখা দিতে পারে।তাই গাছে ফলন আসার পূর্বে বেশি ফলন পেতে আম গাছের আগাম পরিচর্যা করবেন যেভাবে:
বর্ষার পরবর্তী সময়ে এবং আম গাছে মুকুল আসার এক থেকে দেড় মাস আগে গাছের যত্ন কিভাবে নিতে এ বিষয়ে যে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন এই কর্মকর্তা:
১. বর্ষার পরবর্তী সময়ে গাছের গোড়ায় প্রচুর ঘাস জন্মে। এসব ঘাস/ আগাছা গাছের গোড়া থেকে নির্দিষ্ট দূরত্ব পর্যন্ত পরিস্কার করতে হবে এবং খুঁড়তে হবে। এরপর গাছের গোড়া পরিস্কার করে সার প্রয়োগ করতে হবে।
২. বর্তমানে বিভিন্ন রাসায়নিক সার ব্যবহারের প্রবণতা বেড়েছে। শুধুমাত্র রাসায়নিক সার ব্যবহারের কথা চিন্তা না করে জৈব সার ব্যবহার করতে হবে। জৈব সারের একটি উল্লেখযোগ্য স্থান হল গরুর খামার। গোবর সার ব্যবহার করা যেতে পারে। আম গাছে মুকুল আসার এক থেকে দেড় মাস আগে জৈব এবং রাসায়নিক সার ব্যবহার করতে হবে। ভার্মি কম্পোস্ট, ট্রাইকো কম্পোস্ট, গোবর সার ব্যবহার করতে হবে।
৩ .যদি সার প্রয়োগের পর দশ থেকে পনের দিন বৃষ্টি না হয় তাহলে সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। এতে প্রয়োগকৃত সার ভালোভাবে গাছ গ্রহণ করতে পারবে।
৪. তিন থেকে চার বছর বয়সী একটি আম গাছে গোবর সার ২০ কেজি, ইউরিয়া ২০০ গ্রাম, টিএসপি ৩০০ গ্রাম, এম.ও.পি ১৫০ গ্রাম, জিপসাম ১০০ গ্রাম, বোরণ ৪০ গ্রাম ও ৪০ গ্রাম জিঙ্ক প্রয়োগ করতে হবে।
৫. এরপর গাছে নতুন পাতা আসলে একটা কীটনাশক ও একটা ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করতে হবে। এক্ষেত্রে লিভ কাটিং বা পাতা কাটা উইভিল পোকা দমনে কার্বানিল জাতীয় কীটনাশক এবং মেনকোজেব জাতীয় ছত্রাকনাশক ব্যবহার করতে হবে। তাহলে গাছের নতুন ডগা সুরক্ষিত থাকবে। পরবর্তীতে মার্চ-এপ্রিল মাসে নতুন মুকুল এইসব নতুন ডগা থেকেই বের হবে। অর্থাৎ, নতুন ডগার সুরক্ষা দিতে হবে।
৬. আম গাছের পোকা দমনে কার্বানিল ২ গ্রাম প্রতি লিটার, ম্যানকোজেব ২ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। এতে গাছের ক্ষতিকর পোকা দমন হবে।
৭. আম গাছের আরেক শত্রু মিলিবাগ পোকা। যা নতুন পাতার রস খেয়ে পাতা-ডগা বিনষ্ট করে। বাগানে পোকাগুলোর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় পিপড়ার আনাগোনা দেখে। এই পোকাগুলো থেকে হানিডিউ (মিষ্টি জাতীয় পদার্থ) বের হয় যার কারণে পিঁপড়া আকৃষ্ট হয়। হপার পোকা, লিভ মিলিবাগ পোকাগুলোও একইরকম খুব ক্ষতি করে থাকে।
৮। হপার পোকা সাধারণত বাগানে আক্রমণ করলে গাছের পাশ দিয়ে হেঁটে গেলে এক ধরণের (চিট চিট) শব্দ হয়। এ পোকা দমনের জন্য ইমিডাক্লোরোপিড জাতীয় কীটনাশক ব্যবহার করলে সুফল পাওয়া যাবে।
৯।গাছে মুকুল আসার আগে আবহাওয়া কুয়াশাচ্ছন্ন থাকলে তেমন কোনো পরিচর্যা করতে হয়না। যদি আকাশ কুয়াশাচ্ছন্ন এবং আবহাওয়া খারাপ থাকে তাহলে সালফার জাতীয় ছত্রাকনাশক মুকুল আসার আগে প্রয়োগ করতে হবে। এবং একইভাবে মুকুলে প্রয়োগ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
১০. আমের মাছি দমনে ফ্রুট বাগিং প্রযুক্তি সবচেয়ে কার্যকরী। এক্ষেত্রে ফেরোমন ফাদ ব্যবহার করা যেতে পারে।
লেখক:
ড. শরফ উদ্দিন,
উর্দ্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা,
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট।
No comments